“খেলা শেষ হল, শেষ হয় নাই বেলা”— জীবনের অন্তিম অধ্যায়ে লেখা এই পঙ্ক্তির মতোই ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (২৯ আগস্ট ১৯৭৬) বিদায় নেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নির্বাক জীবনের দীর্ঘ সময় শেষে ৭৭ বছর বয়সে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় জন্ম নেয়া নজরুল ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কৈশোরে লেটো দলে গান গাওয়া থেকে শুরু করে সৈনিক জীবন— সব অভিজ্ঞতাই গড়ে তুলেছিল তাঁকে। সাংবাদিকতা, সম্পাদনা, সাহিত্যচর্চা ও সংগীত— প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর দীপ্ত ছাপ।
‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি ঝড় তোলেন বাংলা সাহিত্য আঙিনায়। একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও সাংবাদিক নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল প্রতীক। তিনি যেমন ইসলামী গজল রচনা করেছেন, তেমনি শ্যামাসংগীত ও ভক্তিগীতিও লিখেছেন। প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুরারোপ করে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সংগীত ভাণ্ডার, যা আজ পরিচিত নজরুলসংগীত নামে।
শোষিত মানুষের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক, প্রেম ও মানবতার গান— নজরুলের সৃষ্টিকর্ম আজও আমাদের প্রেরণা, শক্তি ও প্রতিবাদের ভাষা।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তাঁকে সপরিবারে বাংলাদেশে আনা হয় এবং জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয়। প্রয়াণের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় এই মহামানবকে।