ঢাকার উত্তরা এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজে সোমবার ঘটেছে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, যা পুরো জাতিকে শোকাভিভূত করেছে। একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কলেজ ভবনের একাংশে আগুন ধরে গেলে মুহূর্তেই তৈরি হয় আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবন বাঁচাতেই যেখানে সবাই দিশেহারা, সেখানে অতুলনীয় সাহসিকতার পরিচয় দেন কলেজের শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী। আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের নিরাপদে সরিয়ে এনে তিনি অন্তত ২০টি প্রাণ বাঁচিয়েছেন—কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজে বাঁচতে পারেননি।
ঘটনার সময় মাহেরীন চৌধুরী ছিলেন ক্লাসরুমে। বিমান দুর্ঘটনার পর আগুন ও ঘন ধোঁয়ায় চারপাশ যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন, তখন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মাহেরীন চৌধুরী নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে ছাত্রছাত্রীদের শান্ত ও সাহস জোগান। একে একে তিনি তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনেন। তার এই নির্ভীক প্রচেষ্টায় কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী অক্ষত বা সামান্য আহত অবস্থায় উদ্ধার পায়।
তবে সব শিক্ষার্থীকে রক্ষা করার পর নিজে আর বের হতে পারেননি এই মমতাময়ী শিক্ষক। দগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সোমবার রাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।
এই ঘটনায় সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেমে এসেছে শোক ও শ্রদ্ধার বন্যা। মাহেরীন চৌধুরীর সাহসিকতা ও আত্মত্যাগকে শিক্ষাজীবনের প্রতি তার দায়বদ্ধতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ও মাইলস্টোন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, “মাহেরীন ম্যাম আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ করেছেন। তিনি শুধু শ্রেণিকক্ষের একজন শিক্ষিকা ছিলেন না—তিনি ছিলেন আমাদের আদর্শ, আমাদের সাহস। ২০ জন শিক্ষার্থীকে যেভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন, তা আমাদের গর্ব, আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
সাবেক শিক্ষার্থী আমরিন তিশা বলেন,
“আজ আমরা হারালাম একজন সত্যিকারের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষককে। তার আত্মত্যাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সাহস, দায়িত্ববোধ ও মানবিকতার শিক্ষা দেবে। আমরা কখনো মাহেরীন ম্যামের বীরত্ব ভুলব না। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং এই শোকাবহ সময়ে তার পরিবার, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।”