১৯৮১ সালের ডিসেম্বরের এক শীতল সন্ধ্যায়, তরুণ এমদাদ খন্দকার পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদূর আমেরিকার পথে। উদ্দেশ্য ছিল উচ্চশিক্ষা, কিন্তু অন্তরে ছিল আরও বড় কিছু—জীবন গড়ার পাশাপাশি দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন।
দীর্ঘ অধ্যবসায় শেষে ১৯৯২ সালের মে মাসে তিনি Southern Illinois University at Edwardsville (SIUE) থেকে Management Information System (MIS)-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯০ সাল থেকেই তিনি যুক্ত ছিলেন কম্পিউটার ও প্রযুক্তি খাতে। প্রায় তিন দশকের কর্মজীবনে তিনি আমেরিকার বড় বড় হাসপাতালে আধুনিক মেডিকেল ল্যাবরেটরি ডিজাইন, সফটওয়্যার সেটআপ, এবং বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
তিনি শুধু একজন প্রবাসী পেশাজীবী ছিলেন না—তিনি একজন দায়িত্ববান পুত্র, ভাই ও অভিভাবক। ১৯৯০ সালে তিনি তাঁর মা, তিন ভাই এবং পাঁচ বোনকে আমেরিকায় স্পন্সর করে নিয়ে আসেন এবং নিজ হাতে তাঁদের পরিবারগুলো গড়ে তোলেন।
একটি অসম্পূর্ণ ইচ্ছার ভার
তাঁর পিতা, মরহুম ওবায়দুল হক খন্দকার, ছিলেন মিরসরাই উপজেলার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, মহান মুক্তিযোদ্ধা এবং চট্টগ্রাম-১ আসনের দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। একজন আদর্শবাদী রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন স্পষ্টভাষী ও আপসহীন। তাঁর পিতা আমেরিকার পুঁজিবাদী নীতির বিরোধিতা করতেন, তাই চিকিৎসার ভিসা পাওয়ার পরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেননি এবং ১৯৯৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর জীবনের একটি না-পূরণ হওয়া ইচ্ছা ছিল, প্রিয় ছেলেকে দেশের মাটিতে রাজনীতির ময়দানে পাশে পাওয়া। তিনি এমদাদ খন্দকারকে দুইবার নির্বাচনের জন্য দেশে ডেকেছিলেন—একবার জিন্নাহ সাহেবের প্রথম মেয়াদে, আরেকবার সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়। কিন্তু ছেলে তখন দেশের বাইরে কর্মরত থাকায় সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন হয়নি।
তবুও পিতা মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন— “তোমাকে আমেরিকায় পাঠাইয়াছে মিরসরাইবাসী। চোখ বন্ধ করলেই শুনতে পাই তাদের কথা। তারা না বাইলে তুমি হয়তো কখনো এই সুযোগ পেতে না। একদিন সময় হলে, মিরসরাইবাসীর ঋণ খেদমতের মাধ্যমে পরিশোধ করার চেষ্টা করিও।”
অবসর থেকে শিকড়ে ফেরা
চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এমদাদ খন্দকার পরিকল্পনা করেছিলেন জুলাই ২০২৫ সালে অবসর নেওয়ার। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনায় তিনি আরও আগে, জানুয়ারির শেষ দিনে অবসরে চলে যান। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থায়ীভাবে পিতৃভূমি মিরসরাইয়ে ফিরে আসার—যেখানে তাঁর রয়েছে দুটি বাড়ি, রয়েছে দীর্ঘদিনের না-বলা টান।
তাঁর স্ত্রীসহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—বাকি জীবনটা কাটাবেন মিরসরাইয়ের মাটিতে, পিতার ভিটায়, মানুষের পাশে থেকে।
রাজনীতির মাঠে ফেরার অঙ্গীকার
আজ, পিতার সেই অসমাপ্ত স্বপ্নকে পূরণ করতেই, এমদাদ খন্দকার আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
একটি বার্তায় তিনি বলেন, আমি আপনাদের বিএনপি পরিবারের সন্তান এমদাদ খন্দকার। আমার পিতা ছিলেন মিরসরাই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। আমি আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।
আমি আপনাদের সকলের দোয়া, ভালোবাসা ও সমর্থন কামনা করছি। মিরসরাইবাসীর সেবা করার সুযোগ পেলে আমি মনে করি, আমার উপর পিতার আর মিরসরাইয়ের যে ঋণ—তা কিছুটা হলেও পরিশোধ করতে পারব ইনশাআল্লাহ।”
একজন সফল প্রবাসী, একজন দায়িত্বশীল সন্তান এবং একজন আদর্শিক উত্তরসূরি—এমদাদ খন্দকার আজ রাজনীতির মাঠে পিতার সম্মান, ত্যাগ আর আদর্শ বুকে নিয়ে ফিরে আসছেন। সময় বলবে, মিরসরাই তাঁকে কতটা আপন করে নেয়। তবে একথা নিশ্চিত—তাঁর ফেরাটা শুধু ফিরে আসা নয়, বরং শিকড়ে ফেরার এক অনন্য ইতিহাস।