মহাসড়কের মিরসরাই অংশে অনিয়মের ছড়াছড়ি

বাংলাদেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশে রীতিমতো বাড়ছে নানান অনিয়ম। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানান দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।

সারেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা কিংবা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও এখানে এসব কোন নিয়মের তোয়াক্কা নেই। অবাধে যাত্রী বা মালামাল নিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। এখানে উল্টোপথে গাড়ি চলাচল যেন রীতিমতো নিয়মে পরিণত হয়েছে, এসব উল্টোপথের গাড়ি আবার চলছে দ্রুত গতিতে। যাত্রীবাহী গাড়িগুলো নির্দিষ্ট স্টপ মানছে না, যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রীদের উঠানামা করছে। অনেক সময় গাড়ি থামানো কিংবা চলাচলের নির্দিষ্ট সিগন্যাল লাইট ব্যবহার করছে না, এতে ঘটছে দুর্ঘটনা।

মহাসড়কে অবাধে চলছে বালুর ট্রাক। নিয়মমতো ত্রিপল না টানিয়ে বালু পরিবহন করছে, এতে বাতাসের সাথে মহাসড়কে বালু পড়ে পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে সড়ক। এছাড়াও বাতাসে বালু উড়ে পথচারীদের চোখে পড়ছে, যার ফলে ক্ষোভ বাড়ছে পথচারীদের। মহাসড়কের পাশে রীতিমতো রাখা হচ্ছে ব্যক্তিগত জিনিস, যা সড়ক আইনের নিয়ম বহির্ভূত। বিশেষ করে বারইয়ারহাট পৌরসভার ইউ-টার্ন সংলগ্নে রাখা হয়েছে বিশাল বিশাল বালুর স্তূপ। এসব স্তূপ থেকে মহাসড়কে ছড়িয়ে আছে বালু, যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এসকল অনিয়মে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের তৎপরতায় অভিযান দেখা গেলেও দীর্ঘস্থায়ী কোন সমাধানের উদ্যোগ দেখা যায় না।

স্থানীয় এক পথচারী জানান, বারইয়ারহাট পৌরসভার ইউ-টার্নের কাছাকাছি বালুর পাহাড় রাখা হয়েছে। এতে অনেক বালু সড়কে পড়ে আছে। যেকোন সময় এগুলোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটবে। এসবের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া সময়ের দাবি। এছাড়া উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বড় বড় ট্রাক, পিক-আপ, সিএনজি, অটোরিকশা এরা বেশি অনিয়ম করছে।

#
সিএনজির দাপট

নিজামপুর কলেজ শিক্ষার্থী মাঈন উদ্দিন বলেন, বাসে করে আমাদের কলেজে যেতে হয়। এতে করে দেখা যায় বাস চালকরা সড়কের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। যেখানেসেখানে থেকে যান, কার আগে কে যাত্রী উঠাবে এনিয়ে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। যার কারণে নির্দিষ্ট সিগন্যাল লাইট ব্যবহার করে না। এতে পেছনের গাড়ি তার অবস্থান বুঝতে না পেরে দুর্ঘটনার শিকার হন।

মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াত করা সৈয়দ আলিম উদ্দিন বলেন, সড়কে সিএনজি আর অটোরিকশার এত দাপট বেড়েছে এরা সড়কে উঠলে নিজেদের রাজা মনে করে। পুলিশের সামনে এরা দাপটে বেড়ায়। এগুলো সড়কে চলাচল বন্ধ না হলে দুর্ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী বাইকচালক মাসুদ রানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের জন্য মহাসড়ক এখন আতঙ্কের জায়গা। সড়কে পড়ে থাকা বালুগুরো বাতাসে উড়ে আমাদের চোখে পড়ে। এতে করে মহাসড়কে বাইক চালানো হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মহাসড়কের পাশে পাহাড়সম বালু

এবিষয়ে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মহাসড়কের পাশে ১০ মিটারের ভেতর কোন ব্যক্তিগত জিনিস রাখা যাবে না। এসব অবৈধ কোন কিছু যদি প্রশাসন উচ্ছেদ করতে চায় আমার কাজ তাদের সাথে থাকা। এরআগেও কয়েকবার এসব বিষয়ে অভিযান করা হয়েছে। আমরা সবসময় কর্মকর্তাদের বলে আসছি বলবো। দরকার হচ্ছে এ এলাকার সকলে দলমত নির্বিশেষে একত্রিত হয়ে ইউএনও স্যারকে বলা।

তিনি আরও জানান, আমরা প্রতিনিয়ত মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচলে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে দরকার মানুষের সচেতনতা। আমাদের জনবল সংকট আছে।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার বলেন, মহাসড়কের অনিয়ম গুলো দেখার দায়িত্ব সড়ক ও জনপদ বিভাগের। আর উল্টোপথে গাড়ি কিংবা সিএনজি চলাচল এগুলো হাইওয়ে পুলিশ দেখবে। আমাদের দায়িত্ব মাঝেমধ্যে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি।

তিনি আরও জানান, বিষয়গুলো নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর