ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অন্যতম ব্যস্ততম পয়েন্ট বারইয়ারহাট পৌরসভা এলাকা। প্রতিদিন এ পথে শত শত যানবাহনের পাশাপাশি পার হন হাজারো পথচারী। পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য এখানে দীর্ঘদিন আগেই একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই অনেকেই তা ব্যবহার না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরাসরি মহাসড়ক পার হচ্ছিলেন, যার ফলে প্রায়শই ঘটত দুর্ঘটনা—আহত বা নিহত হতেন পথচারীরা।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মহাসড়কের দুই পাশে লোহার বেষ্টনি স্থাপন করেছে, যাতে পথচারীরা বাধ্য হয়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন। এর ফলে হঠাৎ পারাপার বন্ধ হয়েছে, ব্রিজ ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে এবং দুর্ঘটনাও কমেছে—নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ।
তবে নতুন করে শুরু হয়েছে পথচারীদের ভোগান্তি। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও নারী পথচারীরা। সিঁড়ি ভেঙে ওঠানামা করতে গিয়ে অনেকে পড়ছেন দুর্ভোগে। একই চিত্র মিরসরাই উপজেলার বড় দারোগারহাট, নিজামপুর, মিরসরাই ও জোরারগঞ্জের চারটি ফুটওভার ব্রিজেও।
বারইয়ারহাট পৌরসভার স্থানীয় বাসিন্দা এমদাদ খন্দকার হৃদয় বলেন,
“ব্রিজ তো দিল, কিন্তু র্যাম্প নেই। বয়স্ক বা অসুস্থ মানুষদের জন্য সিঁড়ি পার হওয়া খুব কষ্টকর। রোগী থাকলে তো আরও বিপদ।”
বারইয়ারহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলিফা আক্তার জানান,
“সকালে ব্যাগ নিয়ে এত সিঁড়ি উঠতে ক্লান্ত হয়ে যাই। তার ওপর ছাউনিও নেই—রোদ-বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।”
এছাড়া অনেক ফুটওভার ব্রিজে নেই পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা বা সিসিটিভি ক্যামেরা। ফলে সন্ধ্যার পর অনেকেই ব্রিজে চলাচল করতে ভয় পান। নারী পথচারীদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর ব্রিজে কিছু যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তারা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বারইয়ারহাট পৌর প্রশাসক সোমাইয়া আক্তার বলেন, “বারইয়ারহাটে আন্ডারপাস বা ওভারপাস নির্মাণের দাবির বিষয়ে ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগে সাথে কথা হয়েছে। স্থানীয়দের স্মারক লিপি তাদের কাছে ফরোয়ার্ড করা হয়েছে। ফুটওভার ব্রিজগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
সওজের চট্টগ্রাম উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফারহান বলেন, “আমরা স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি অবগত। চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১০ লেন প্রকল্পের আওতায় বারইয়ারহাট পৌরবাজার এলাকায় আন্ডারপাস ও ওভারপাস উভয় ব্যবস্থার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বারইয়ারহাটে নতুন একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবও হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে জনগণের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা হবে।”
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুন বারইয়ারহাট পৌরবাজার উন্নয়ন কমিটি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি তোলা হয়। এতে এলাকার সাধারণ মানুষও সংহতি প্রকাশ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই মহাসড়ক পার হন। নিরাপদ পারাপারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও তা শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের জন্য যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি এর কারণে আশপাশের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”