মিরসরাই উপজেলার পশ্চিম অলিনগর গ্রামের কৃতি সন্তান, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী, রাজনীতিক, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ওবায়দুল হক খোন্দকারের জীবন ছিল সংগ্রাম ও সেবামূলক কর্মের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
১৯২৩ সালে পশ্চিম অলিনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম মখলছের রহমান এবং মা লায়লা বেগম। শিক্ষাজীবনের শুরু অলিনগর মক্তব ও করেরহাট মাইনর স্কুলে। এরপর সীতাকুণ্ড হাই স্কুল ও আবুতোরাব হাই স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাশ করেন। ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
ফেনী কলেজে পড়াকালীন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দু’বার নির্বাচিত হন— একবার খেলাধুলা সম্পাদক ও পরে জিএস হিসেবে। পরে রাজনৈতিক কারণে চট্টগ্রাম কলেজে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে বহিষ্কৃত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি আবার ফেনী কলেজে ফিরে যান। ছাত্রজীবন থেকেই মওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন তিনি।
পাহাড়ি অঞ্চলে রিফিউজিদের বসতি স্থাপন আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। সরকারের বাধার মুখেও তিনি তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়েন। দীর্ঘ ৮ বছর সংগ্রাম চালিয়ে কারাবরণ করেন এবং পরে হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপন করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। শ্রীনগরে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। স্বাধীনতার পর সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। প্রতিষ্ঠা করেন অলিনগর লায়লা বেগম (এলবি) হাই স্কুল, বিএমকে প্রাইমারী স্কুল ও একটি মসজিদ।
রাজনীতির ময়দানে তিনি ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ ফজলুল হক বিএসসি। ১৯৯১ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হলেও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হন।
১৯৯৯ সালের ২২ মার্চ দিবাগত রাত পৌনে বারোটায় নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই সংগ্রামী পুরুষ। পরদিন বাদ জোহর তাঁর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ প্রাঙ্গণে ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৭৬ বছর।
ওবায়দুল হক খোন্দকারের অবদান আজও মিরসরাইবাসীর স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। শিক্ষাক্ষেত্র, সমাজসেবা ও রাজনীতিতে তাঁর অবদান অনন্য। তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও মসজিদ আজও এলাকাবাসীর কল্যাণে কাজ করছে।