ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের নানামুখী সমস্যা সমাধানে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘অ্যাকশন ফর কমিউনিটি ট্রান্সফরমেশন (অ্যাক্ট)’ নামের একটি সংগঠন।
রোববার (২২ জুন) সংগঠনটির সদস্যরা উপাচার্যের প্রশাসনিক কার্যালয়ে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে ছাত্রীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. ম্যাট্রিকুলেশন ও পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালায় স্বচ্ছতা ও মানবিকতা নিশ্চিত:
ছাত্রীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণকে বিবেচনায় নিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন ও পরীক্ষার সময় নির্ধারণে নমনীয় ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের দাবি জানানো হয়, যেন তারা শিক্ষা জীবনে কোনরূপ বৈষম্যের শিকার না হন।
২. আবাসন সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ:
অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের ছাত্রীদের জন্য নতুন আবাসিক হল ও ভবন নির্মাণের আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে পরীক্ষার ফি ও অন্যান্য ফি প্রদান সাপেক্ষে অস্থায়ী আবাসনের সুযোগ দেওয়া যে বৈষম্যের জন্ম দেয়, তা বন্ধের দাবিও জানানো হয়।
৩. নিরাপদ ক্যাম্পাস ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ:
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার পাশাপাশি যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ সেল গঠন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলা হয়।
৪. মানসম্মত চিকিৎসা ও ল্যাব সুবিধা:
হলভিত্তিক চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী চিকিৎসক ও নার্স নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
৫. নিরাপদ যাতায়াত ও পর্যাপ্ত বাস সার্ভিস:
বিশেষ করে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও নামমাত্র বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্রীদের জন্য আলাদা ও নিরাপদ বাস সার্ভিস চালুর দাবি জানানো হয়। এছাড়া ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস, দক্ষ ড্রাইভার ও যাত্রী ছাউনির প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে উপাচার্য জানান, এসব বিষয় নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি কাজ করবে। মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে তিনি ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানবিক ও নমনীয় অবস্থান নেওয়ার আশ্বাস দেন। অন্যান্য দাবিগুলোকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি। অ্যাক্টের সদস্যরাও বিষয়টির প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অ্যাক্টের প্রতিনিধি মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম সাকাফি বলেন, “আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ও মর্যাদার শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। ক্যাম্পাসে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সত্যিকারের নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক, যেখানে নারী শিক্ষার্থীরা নিজস্ব মত প্রকাশ, নেতৃত্ব প্রদান এবং ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা অর্জনে বাধাহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারে। সেজন্য প্রশাসনিক দায়িত্ব হলো যথাযথ নীতিমালা গ্রহণ, নজরদারি এবং অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা।”
আরেক প্রতিনিধি, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে ছালমা বলেন, “আমাদের কার্যক্রমের শুরু মূলত নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও বাধ্যতামূলক ক্লাসে উপস্থিতির নিয়ম লঘু করার দাবির মধ্য দিয়ে। এ ছাড়াও আবাসন সংকট সমাধানে নতুন ভবন নির্মাণ, কমন রুম ও ক্যান্টিনের মানোন্নয়ন, নারীদের উপযোগী কমন রুম পরিবেশ নিশ্চিত করতে নারী কর্মচারী নিয়োগ এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের দাবিও তুলেছি। আমাদের এই উদ্যোগে নারী শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ ও পরামর্শকে আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি।”