২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। সংসদ না থাকায় এবার প্রচলিত রীতি থেকে কিছুটা ভিন্নভাবে বাজেট অনুমোদন হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করেন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মতামত গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়। পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন চেম্বার নিজেদের মতামত প্রকাশের মাধ্যমে প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
বাজেটে বড় কোনও পরিবর্তন না থাকলেও সমালোচনার মুখে থাকা ফ্ল্যাট কেনা ও ভবন নির্মাণে অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যবহারের সুযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা জনমতের প্রতি সরকারের মনোযোগের ইঙ্গিত দেয়। ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এই লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
প্রকল্প ব্যয়ের তুলনায় ঘাটতির পরিমাণ এবারও উল্লেখযোগ্য—২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঋণের এই নির্ভরতা ভবিষ্যতে অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিনিয়োগ ও ব্যয় নির্বাহে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে, ৬২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় বাজেটে বৈচিত্র্য এসেছে। ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে, বাকিগুলোর বাজেট অপরিবর্তিত অথবা কমেছে। এ ধরনের বাজেট বণ্টন প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রাধিকার প্রতিফলিত করে, তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ওপর।
মোটের ওপর, এবারের বাজেট প্রক্রিয়া অনন্য হলেও স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণের প্রশ্নে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। সংসদীয় আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ না থাকায় জনগণের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধিত্ব সেভাবে প্রতিফলিত হয়নি। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এই পদ্ধতি প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আগামী দিনে বাজেট প্রণয়নে অংশগ্রহণমূলক ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ার প্রসার প্রত্যাশা করা যায়, যাতে নীতি গ্রহণ আরও জবাবদিহিমূলক ও জনগণের চাহিদার প্রতিফলন ঘটায়।