প্রতিবেশী যদি অমুসলিমও তার সঙ্গে সদাচরণ করা, বিপদাপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা, অসুস্থ হলে খোঁজখবর নেওয়া ও সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা। এটিও প্রতিবেশীর হকের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)
আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, ‘এক ইহুদি বালক রাসুল (সা.)-এর খেদমত করত। একবার সে অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) তাকে দেখতে গেলেন।
অতঃপর তাকে বলেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। ফলে সে মুসলিম হয়ে গেল। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৫৭)
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হিন্দু ছেলেটিকে দেখতে যাওয়া ও আর্থিক সহযোগিতা করা অন্যায় হয়নি; বরং প্রতিবেশীর হক আদায়ের কারণে তা প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে গণ্য হবে। তবে মুসলমানের ওপর অমুসলিমকে প্রাধান্য দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়া নিষেধ। কোরআনে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
সূত্র : ফাতহুল বারি : ৩/২৬২; ১০/১২৫; উমদাতুল কারি : ২১/২১৮; আলবাহরুর রায়িক : ৮/২০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৪৮; রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৮৮
অমুসলিমরা যাতে ইসলাম গ্রহণ করে, হেদায়েতপ্রাপ্ত হয় এ ধরনের দোয়া করা। এ ধরনে দোয়া করা জায়েজ এবং উত্তম। রাসূল (সা.) এ ধরনের দোয়া করেছেন
হাদিস শরিফে এসেছে, ইবনে উমর (রা.) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাসূল (সা.) বলেছেন: ‘হে আল্লাহ্! এই দুই জন লোকের মধ্যে যে ব্যক্তি আপনার কাছে অধিক প্রিয় তার মাধ্যমে আপনি ইসলামকে শক্তিশালী করুন: আবু জেহেল কিংবা উমর বিন খাত্তাব।’ (সুনানে তিরমিযি; হাদিস: ৩৬৮১, আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
অমুসলিমদের জন্য গুনাহের ক্ষমা প্রার্থণা করা কিংবা এ-জাতীয় কোন দোয়া করা। আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে এটি হারাম।
ইমাম নববী বলেন: ‘পক্ষান্তরে, কাফেরের জন্য রহমত প্রার্থনা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এটি কুরআনের দলিল ও ইজমার ভিত্তিতে হারাম।’ (আল-মাজমু ৫/১২০)
আল্লাহ তাআলা বলেন- নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা সংগত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত। (সূরা আত তওবা : ১১৩)
অমুসলিম প্রতিবেশী বা পরিচিত কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া যাবে না-এমন একটি ধারণা অনেকের রয়েছে। আবার অনেকে মনে করে যে, মানবিক কারণে ‘ঈয়াদাত’ করা গেলেও সুস্থতার জন্য দোয়া করা যাবে না।
দু’টো ধারণাই ভুল; বরং প্রতিবেশী, আত্মীয় বা পরিচিত কেউ অমুসলিম হলেও অসুস্থ হলে তার ‘ঈয়াদাত’ করা উচিত। সেক্ষেত্রে একজন মুসলমানের তাকে দেখতে যাওয়া, খোঁজ-খবর নেওয়া এবং সম্ভাব্য সকল সেবা-শুশ্রূষা করা, উপরন’ তাদের সুস্থতা ও হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করাতে অসুবিধার কিছু নেই; বরং পারিপার্শ্বিক অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে এমনটি করাই উত্তম।
কোনো বিধর্মী আত্মীয় বা প্রতিবেশী অসুস্থ হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দেখতে যেতেন এবং দ্বীনের দওয়াত দিতেন।
সহিহ বুখারিতে আছে, এক ইহুদী কিশোর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তখন সে মুসলমান হয়ে গেল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩৫৬, ৫৬৫৭)
সুতরাং কোনো পরিচিত অমুসলিম ব্যক্তি অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া ও তার সুস্থতার জন্য দোয়া করার অবকাশ আছে। সম্ভব হলে তার সামনে দ্বীনের দাওয়াতও পেশ করা উচিত। হতে পারে আল্লাহ তাআলা তাকে হক কবুল করার তাওফীক দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দান করবেন।