ফেনীতে ভারী বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে আসা পানির চাপে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় রাস্তা-ঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে পরশুরাম উপজেলার যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে।
জানা গেছে, মুহুরী নদীর বাঁধে পরশুরামের জঙ্গলঘোনা, অলকা ও শালধর এবং ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সিলোনিয়া নদীর গদানগর ও দেড়পড়া এবং কহুয়া নদীর সাতকুচিয়া, বেড়াবাড়িয়া ও দৌলতপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এসব ভাঙনের ফলে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পরশুরামের মধ্যম ধনীকুন্ডা এলাকার নাহিদা সুলতানা বলেন, “সন্ধ্যার পর থেকেই ঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। ছাদে উঠে কোনোরকমে আশ্রয় নিয়েছি।”
অন্যদিকে, মির্জানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির অভিযোগ তুলে বলেন, “বল্লামুখা বাঁধের প্রবেশমুখটি আগেই বন্ধ করা গেলে এমন পরিস্থিতি হতো না।”
ফুলগাজী ইউএনও ফাহরিয়া ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে তিনটি স্থান ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে এবং শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। তাদের খাবার ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৪৪১ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আরও দুই দিন মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানিয়েছেন, নদীগুলোর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আরও ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় ফুলগাজী ও পরশুরামে ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো ও রান্না করা খাবারের জন্য ৬.৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।
তিনি আরও বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখায় ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।