মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংস হত্যা, ভিডিও ভাইরাল

রাজধানীর ঐতিহাসিক স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল কম্পাউন্ডে শত শত মানুষের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে। গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া এই ভয়ংকর ঘটনাটি এখন সারাদেশে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। হাসপাতালের মাঝখানে প্রকাশ্যে কুপিয়ে, পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়, এরপর লাশটিকে রাস্তার মাঝে ফেলে তার ওপর লাফিয়ে উল্লাস করে খুনিরা। পুরো ঘটনা ধরা পড়ে পাশের সিসিটিভি ফুটেজে, যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

ঘটনার সময় অদূরে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চলছিল, নিরাপত্তায় ছিলেন আনসার ক্যাম্পের সদস্যরাও, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে সোহাগকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, সে আগেই মারা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসীরা শুধু হত্যাই করেনি, মৃত্যুর পরও তার নিথর দেহের ওপর বারবার আঘাত করে গেছে। এমনকি রাস্তায় ফেলে রেখে তার নাক-মুখে ও বুকে একের পর এক আঘাত করা হয়। খুনের সময় কয়েকজন মোবাইলে কথা বলছিল, কেউ লাশের ওপর লাফাচ্ছিল, কেউ ঘুষি মারছিল—আর এসব কিছুই শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে দেখে গেছে নিরব দর্শকের মতো।

নিহত সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙাড়ি ও পুরোনো বৈদ্যুতিক কেবল ব্যবসা করতেন। তার দোকানের নাম ছিল সোহানা মেটাল। ওই এলাকার তার-বাণিজ্যে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ছিল, যার নিয়ন্ত্রণ ছিল সোহাগের হাতে। দীর্ঘদিন ধরেই এই নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছিল মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু নামে দুই ব্যক্তি। তারা সোহাগের ব্যবসায় ৫০ শতাংশ অংশীদারিত্ব দাবি করেছিল। সোহাগ রাজি না হওয়ায় তাকে নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার জন্য হুমকি দিত। এ নিয়ে চলতে থাকা বিরোধই শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।

স্থানীয়রা জানান, নিহত সোহাগ এবং হামলায় জড়িত মহিন, টিটু, মনির, সজীবসহ অধিকাংশই যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দলীয় পরিচয়ের ছত্রছায়ায় এলাকায় তারা ব্যবসায় প্রভাব বিস্তার করত। নিহতের ভাগ্নি মীম আক্তার বলেন, তার মামা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং মিটফোর্ডে ব্যবসা করতেন। টিটু ও মহিনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব চলছিল। তারা সোহাগের ব্যবসায় জোরপূর্বক অংশীদার হতে চেয়েছিল। মামা তা না মানায় তাকে হত্যা করা হয়।

#

সোহাগের আরেক স্বজন জানান, ঘটনার দিন দুপুরে টিটু সোহাগের বাসায় গিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে এবং বলে সব মিটমাট হয়ে যাবে। এরপর সোহাগকে কৌশলে মিটফোর্ড এলাকায় নিয়ে গেলে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা ৪০-৫০ জন একযোগে তার ওপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম। মামলায় সরাসরি জড়িত হিসেবে ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদারের নাম রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে প্রধান অভিযুক্ত মহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যৌথ বাহিনীর একটি দল মামলার অন্য এক আসামিকেও আটক করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আমিনুল কবির তরফদার জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে এবং জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

সূত্র: সময়ের কণ্ঠস্বর

এ সম্পর্কিত আরও খবর